কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এইচএসসি – আই.সি.টি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) [ HSC – ICT (Information and Communications Technology) ] তথা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর – আই.সি.টি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) [ Class 11 & 12 – ICT (Information and Communications Technology) ] এর ২য় অধ্যায় [ Chapter 2] এ পড়ানো হয়। তাছাড়া আলিম ক্লাস [ Alim Class ] ও অন্যান্য শিক্ষা ব্যবস্থায় এই বিষয়টি পড়ানো হয়।
Table of Contents
কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং
কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং (নেটওয়ার্ক) হলো হার্ডওয়্যার কম্পোনেন্ট ও কম্পিউটারের সমষ্টি যা কমিউনিকেশন চ্যানেল এর মাধ্যমে ইন্টারকানেক্টেড থাকে এবং বিভিন্ন তথ্য ও রিসোর্স শেয়ার অনুমোদন করে। নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে দুরবর্তী যে কোন কম্পিউটারে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংকে অনেক সময় দূরসঞ্চারের (টেলিযোগাযোগ) বিভাগ বলে ধরা হয়ে থাকে।
শুরুর দিকে একাধিক কম্পিউটারের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদানের কাজ মানুষই করত। ১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বরে জর্জ স্তিবলিৎজ প্রথম একটি দূরসঞ্চার যন্ত্র ব্যবহার করেন নিউ হ্যাম্পস্যার এর ডর্টমাউথ কলেজ থেকে নিউইয়র্কে তাঁর জটিল সংখ্যা গননার যন্ত্রের মধ্যে সংযোগস্থাপনের জন্যে। ১৯৬৪ সালে ডর্টমাউথ এক বিশাল কম্পিউটার ব্যবস্থার বিতরিত ব্যবহারকারীদের জন্য একটি সময় বিভক্তিকরন ব্যবস্থা উদ্ভাবন করে।
ওই একই সালে জেনারেল ইলেক্ট্রিক ও বেল ল্যাবরেটরির সাহায্যপ্রাপ্ত কিছু গবেষক একটি পিডিপি-৮ কম্পিউটারকে ব্যবহার করেন টেলিফোন সংযোগকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালন করার জন্য। ১৯৬৯ সালে লস এঞ্জেলস এর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যানফোর্ডের এস আর আই, সান্তা বারবারার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও উতা বিশ্ববিদ্যালয় আরপানেট এর মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে ৫০ কেবিপিএস (কিলোবিট প্রতি সেকেন্ডে) গতিতে সংযোগ স্থাপন করে।
দুই বা ততোধিক কম্পিউটার বা অন্য ডিভাইসকে কোনো নির্দিষ্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে একে অপরের সাথে কানেক্ট বা যুক্ত করে দেওয়াকেই বলা হয় কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং। এই ব্যবস্থা মূলত এই কানেক্টেড ডিভাইস গুলোর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান বা Data Transfer করে থাকে।
একটি নেটওয়ার্কে অনেকগুলো কম্পিউটার যুক্ত থাকায় এখানে যেকোনো কম্পিউটারের মাঝে তথ্য আদান-প্রদান খুবই সহজে করা যায়। একটি নেটওয়ার্ক তৈরিতে কম্পিউটার ছাড়াও আরও বিভিন্ন টুলস বা ডিভাইসের প্রয়োজন হয়ে থাকে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের বিভিন্ন অংশের মধ্যে রয়েছে সার্ভার, ক্লায়েন্ট, মিডিয়া, নেটওয়ার্ক এডাপ্টার, রিসোর্স, ইউজার, প্রটোকল ইত্যাদি।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং-এর সুবিধা
কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর সুবিধাগুলো নিচে দেয়া হলঃ
- একটি নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত সকল কম্পিউটারের মধ্যে কানেকশন থাকায় যেকোনো ফাইল শেয়ারিং খুব সহজে শেয়ার করা যায়।
- একটি নেটওয়ার্কের সকল কম্পিউটারে একই সফটওয়্যার ইনস্টল না করে একটি কম্পিউটারে ইনস্টল করে বাকি সবগুলোতে ব্যবহার করা যায়।
- এছাড়াও বিভিন্ন হার্ডওয়্যারও একই নেটওয়ার্কের মধ্যে শেয়ার করা যায়। এর অনেক কমন একটি উদাহরণ হল প্রিন্টার। খেয়াল করলে দেখা যায়, কোনো অফিসে একটি প্রিন্টার অনেকগুলো কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে এবং ঐ একটি প্রিন্টার দিয়েই ঐ অফিসের সকল কম্পিউটার থেকে বিভিন্ন ডকুমেন্ট প্রিন্টিং-এর কাজে ব্যবহার করা হয়।
- একই ফাইল কপি করে অনেকগুলো ডিভাইসে রাখা যায় দেখে কোনো ডেটা হারানোর ভয় থাকে না।
- নেটওয়ার্ক অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় কোনো কম্পিউটারের রিসোর্স লোড বেশি হলে অন্য কোনো কম্পিউটার যেটাতে লোড কম সেখানে ট্রান্সফার করা যায়।
- একই সাথে অনেকগুলো ডিভাইসে কাজ করা যায় দেখে কাজের গতি অনেক বেড়ে যায়।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং-এর প্রকারভেদ
কতটুকু এরিয়া জুড়ে একটি নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হবে তার উপর ভিত্তি করে নেটওয়ার্ককে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলঃ
- PAN (Personal Area Network)
- LAN (Local Area Network)
- MAN (Metropolitan Area Network)
- WAN (Wide Area Network)
পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা PAN
১মিটার থেকে ১০মিটার এরিয়া জুড়ে বিস্তৃত কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিভাইসের মধ্যে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হলে তাকে Personal Area Network বলা হয়। এই সংযোগ তারযুক্ত বা তারবিহীন উভয়ভাবেই হতে পারে। টেলিফোন, মোবাইল ফোন, পিডিএ, প্রিন্টার, ফ্যাক্স মেশিন ইত্যাদি ডিভাইসের মাঝে এই নেটওয়ার্ক দেখা যায়। আমরা খুব সহজেই আমাদের ফোনের ব্লুটুথের সাথে কোনো কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সাথে কানেক্ট করে থাকি। এই ধরনের নেটওয়ার্কিই হল পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক।
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা LAN
একই বিল্ডিং এর মাঝে কয়েকটি কম্পিউটার নিয়ে যে নেটওয়ার্ক গঠিত হয় তাকে বলা হয় Local Area Network। PAN এর তুলনায় এই নেটওয়ার্কের রেঞ্জ আরও বড় হয়। সাধারণত ১০০মিটার পর্যন্ত এরিয়া জুড়ে এই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা দেখা যায়। এই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় ব্যবহৃত ডিভাইস সমূহের মধ্যে হাব, সুইচ, রিপিটার ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, ছোট অফিস ইত্যাদি স্থানে এই নেটওয়ার্কগুলো দেখা যায়। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডিভাইসসমূহের মধ্যে ডেটা বা তথ্য এবং রিসোর্স শেয়ার করা যায়।
মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক বা MAN
কয়েকটি LAN এর সমন্বয়ে গঠিত নেটওয়ার্ককে বলা হয় Metropolitan Area Network। একটি শহরের মধ্যে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাকেই মুলত MAN বলা হয়। এই নেটওয়ার্ক সাধারণত ৫০-৭৫মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে। এর ডেটা ট্রান্সফার স্পিডও তুলনামূলক অনেক বেশি হয়ে থাকে। এই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় রাউটার, সুইজ, মাইক্রোওয়েভ এন্টেনা ইত্যাদি ডিভাইস ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বা WAN
দূরবর্তী একাধিক LAN বা MAN নিয়ে গঠিত হয় Wide Area Network। একটি দেশের ভিতর বা একাধিক দেশের ভিতরে এই ধরনের নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়। রাউটার, মডেম, ওয়্যান সুইজ ইত্যাদি ডিভাইস এই নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর বিস্তারিত ঃ
আরও পড়ুনঃ